সর্বশেষ

পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাসের নাম পরিবর্তন: বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া


সুচিত্রা সেনের একটি কালো-সাদা প্রতিকৃতি এবং পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্রীনিবাস 'জুলাই ৩৬' নামফলক
সুচিত্রা সেনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে 'জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস' – পাবনায় বিতর্কিত সিদ্ধান্ত

পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের তিনটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত সাম্প্রতিক দিনে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে, কলেজের সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাসের নাম বদলে 'জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস' রাখার সিদ্ধান্ত স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সুচিত্রা সেন এই উপমহাদেশের কিংবদন্তি অভিনেত্রী এবং পাবনার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার নাম থেকে হলের নাম প্রত্যাহারকে অনেকেই পাবনাবাসীর গর্বের প্রতি অবিচার হিসেবে দেখছেন।

সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, পাবনার সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ মধু এ প্রসঙ্গে বলেন, "এটি কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। সুচিত্রা সেন সব ধরনের রাজনীতির ঊর্ধ্বে ছিলেন। তার নামে করা হলের নাম পরিবর্তন পাবনাবাসীর জন্য লজ্জাজনক।" তিনি আরও যোগ করেন যে, এই সিদ্ধান্তের ফলে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

এদিকে, কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল আউয়াল মিয়ার বক্তব্যে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য। তিনি দাবি করেন, সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাসের নামকরণ শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিল। তার মতে, তৎকালীন সময়ে একটি রাজনৈতিক চাপের কারণে এই নামকরণ করা হয়েছিল এবং কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের অধিকাংশ সদস্য তখনই এটির বিরোধিতা করেছিলেন। অধ্যক্ষ আরও উল্লেখ করেন, "সুচিত্রা সেন বাংলাদেশের নাগরিকও নন, তাই তার নামে একটি ছাত্রীনিবাস রাখার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন আছে।"

নাম পরিবর্তনের পক্ষে কলেজ কর্তৃপক্ষের যুক্তি হলো, এটি একাডেমিক কাউন্সিলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। নতুন নাম 'জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস' রাখার পেছনে ২০১১ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে বলে তারা দাবি করেন। তবে এই যুক্তি অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না।

সুরকার প্রিন্স মাহমুদসহ পাবনার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। প্রিন্স মাহমুদ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, "সুচিত্রা সেন শুধু পাবনার নন, বাংলাদেশের একটি ব্র্যান্ড। তার নাম মুছে ফেলার কোনো যুক্তি নেই।"

এছাড়াও, কলেজের অন্য দুটি হলের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। শেখ রাসেল ছাত্রাবাস এখন 'বিজয় ২৪ হল' এবং বেগম ফজিলাতুন্নেছা ছাত্রীনিবাসের নাম পরিবর্তন করে 'আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) ছাত্রীনিবাস' রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের মতে, এই পরিবর্তনগুলোও একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে করা হয়েছে।

নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত পাবনার সুশীল সমাজ ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, সুচিত্রা সেনের মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা উচিত নয়। এই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি উঠেছে, সুচিত্রা সেনের নাম পুনরায় বহাল করা হোক।

এই ঘটনা শুধু একটি স্থানীয় ইস্যুই নয়, এটি জাতীয় স্তরেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সুচিত্রা সেনের নামের প্রতি এই আচরণ অনেকের কাছেই বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি অবহেলা হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, কর্তৃপক্ষ এই বিতর্কের মধ্যে কোন সিদ্ধান্ত নেন


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন